ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম ভূমিকা
ঈদ মুসলমানদের জন্য একটি আনন্দের দিন, যা মহান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যম। ঈদের নামাজ আদায় করা সুন্নাতে মুআক্কাদা, যা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখনও বাদ দেননি। তাই প্রত্যেক মুসলমানের উচিত ঈদের নামাজ আদায় করা এবং সুন্নাহ মোতাবেক তা পালন করা।
ঈদের নামাজের নিয়ম ও পদ্ধতি
ঈদের নামাজ দুই রাকাত, যা জামাতে আদায় করা হয় এবং খুতবা দেওয়া হয়। এর জন্য আজান ও ইকামত দেওয়া হয় না।
উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
صَلاَةُ الْجُمُعَةِ رَكْعَتَانِ وَصَلاَةُ الْفِطْرِ رَكْعَتَانِ وَصَلاَةُ الأَضْحَى رَكْعَتَانِ وَصَلاَةُ السَّفَرِ رَكْعَتَانِ
জুমু‘আর সালাত দু’ রাক‘আত, ঈদুল ফিতরের সালাত দু’ রাক‘আত, ঈদুল আজহার সালাত দু’ রাক‘আত এবং সফর অবস্থায় (চার রাক‘আত বিশিষ্ট ফরয) সালাত দুই রাক‘আত। (নাসাঈ : ১৪২০)
এ দু’ রাক‘আত ঈদের সালাতের আগে পরে কি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন নফল সুন্নাত সালাত পড়তেন?
না, ঈদের সালাতের সাথে এর আগে পরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন নফল সুন্নাত সালাত আদায় করেননি। (মুসনাদে আহমাদ)
ঈদের নামাজ কত তাকবীর? আসুন জেনে নেই
১২ তাকবীরে ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম
ঈদের নামাজ কত তাকবীর? এবং ঈদের নামাজ আদায়ের নিয়মাবলী জানুন দলিল ভিত্তিক
প্রথম রাকআতে অতিরিক্ত ৭ এবং দ্বিতীয় রাকআতে অতিরিক্ত ৫ তাকবীরে (অর্থাৎ অতিরিক্ত মোট ১২ তাকবীরে) যারা ঈদের সালাত আদায় করে থাকেন তাদের দলীল কি?
(১) আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন যে,
أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ -صلى الله عليه وسلم- كَانَ يُكَبِّرُ فِي الْفِطْرِ وَالأضْحٰى فِي الأُوْلٰى سَبْعَ تَكْبِيْرَات وَفِيْ الثَّانِيَةِ خَمْسًا
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার সালাতে ১ম রাকআতে (অতিরিক্ত) ৭টি তাকবীর ও ২য় রাকআতে (অতিরিক্ত) ৫টি তাকবীর পাঠ করতেন। (আবূ দাউদ : ১০১৮)
[২] হাদীসে আরো এসেছে :
ابنُ عباس كَبَّرَ فِي العِيْدِ اثْنَتَى عَشَرَةَ تَكْبِيْرَةً سَبْعًا فِي الأُوْلَى وَخَمْسًا فِي الآخِرَةِ
(প্রখ্যাত সাহাবী) ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু ঈদের সালাতে অতিরিক্ত) ১২ তাকবীর বলেছেন। প্রথম রাকআতে ৭টি এবং দ্বিতীয় রাকআতে ৫টি। (বায়হাকী ৩/৪০৭)
ঈদায়নের ১২ তাকবীর দেয়ার ছালাতের পদ্ধতি (كيفية صلاة العيدين) :
এখন অনেকেই এই সত্য বিষয়টি জানার পরও সত্যকে উপেক্ষা করে চলবে তারা বলবে আমাদের বাপ দাদারা কি ভুল করে আসছে অধিকাংশ মানুষ কি ভুল করছে আসুন আমরা তাদের বিষয়ে একটু সংক্ষিপ্ত ভাবে জেনে নিন
হক গ্রহন করতে মানুষ যে সকল বাধার সম্মুখীন হয় তা হলো-
❌ বাপ-দাদারা কি এতদিন ভুল করে আসছেন?
❌ এত বড় বড় আলেম তো এভাবেই আমল করে আসছেন! তারাও ভুল?
❌ অধিকাংশ মানুষই তো এই আমল করছে, সবাই ভুল?
❌ এত বড় বড় হুজুর এ আমল করছে, তা কি ভুল ?
❌ এত লোক অমুক আমল করছে , তা কি আর বিদআত হয় ?
➡️ অধিকাংশ যে কোন দলিল হতে পারে না, তার প্রমান দেখুন কোরআন হতে ⬇️
✅ অধিকাংশই নির্বোধ। [মায়িদাহ ১০৩]
✅ অধিকাংশ লোকই অবগত নয়। [আনআম ৩৭]
✅ অধিকাংশই অজ্ঞ [আনআম ১১১]
✅ অধিকাংশই জানে না [আরাফ ১৩১]
তুমি যদি পৃথিবীর অধিকাংশ লোকের অনুসরন কর তাহলে তারা তোমাকে আল্লাহর পথ হতে বিচ্যুত করে ফেলবে, তারা কেবল আন্দাজ-অনুমানের অনুসরন করে চলে; তারা মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছুই করে না [আনআম ১১৬]
কুরআন কারীমে আল্লাহ তা’আলা বলেছেন:
وَإِذَا قِيلَ لَهُمُ اتَّبِعُوا مَا أَنزَلَ اللَّهُ قَالُواْ بَلْ نَتَّبِعُ مَا أَلْفَيْنَا عَلَيْهِ آبَاءَنَا أَوَلَوْ كَانَ آبَاؤُهُمْ لاَ يَعْقِلُونَ شَيْئًا وَلاَ يَهْتَدُونَ
আর যখন তাদেরকে কেউ বলে যে, সেই হুকুমেরই আনুগত্য কর যা আল্লাহ্ তা’আলা নাযিল করেছেন, তখন তারা বলে কখনো না, আমরা তো সে বিষয়ের অনুসরণ করব। যাতে আমরা আমাদের বাপ-দাদাদেরকে দেখেছি। যদি ও তাদের বাপ দাদারা কিছু জানতো না, জানতো না সরল পথও। [সূরা বাকারাহ্: ১৭০]
📌 ১ম রাক‘আতে তাকবীরে তাহরীমা ও ছানা পাঠের পর ধীরস্থিরভাবে স্বল্প বিরতি সহ পরপর সাত তাকবীর দিবে। অতঃপর আঊযুবিল্লাহ-বিসমিল্লাহ সহ ইমাম সরবে সূরায়ে ফাতিহা ও অন্য সূরা পড়বেন এবং মুক্তাদীগণ চুপে চুপে কেবল সূরায়ে ফাতিহা পড়বে। অনুরূপভাবে ২য় রাক‘আতে দাঁড়িয়ে ধীরস্থিরভাবে পরপর পাঁচটি তাকবীর দিয়ে কেবল ‘বিসমিল্লাহ’ সহ সূরায়ে ফাতিহা ও অন্য একটি সূরা পড়বে। এ সময় মুক্তাদীগণ চুপে চুপে কেবল সূরা ফাতিহা পড়বে।
প্রথম রাক‘আতে সূরায়ে ক্বাফ অথবা আ‘লা এবং দ্বিতীয় রাক‘আতে সূরায়ে ক্বামার অথবা গা-শিয়াহ পড়বে’। [মুসলিম, মিশকাত হা/৮৪০-৪১ ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, ‘ছালাতে ক্বিরাআত’ অনুচ্ছেদ-১২।] অন্য সূরাও পড়া যাবে।[আবুদাঊদ হা/৮১৮, ৮২০, ৮৫৯] প্রতি তাকবীরে হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠাবে ও বাম হাতের উপর ডান হাত বুকে বাঁধবে। অতিরিক্ত তাকবীর সমূহ বলতে ভুলে গেলে বা গণনায় ভুল হ’লে তা পুনরায় বলতে হয় না বা ‘সিজদায়ে সহো’ লাগে না।[মির‘আত হা/১৪৫৭, ২/৩৪১ পৃঃ; ঐ; হা/১৪৫৫-এর আলোচনা ৫/৫৩-৫৪; ইরওয়া ৩/১১৩।]
🔴 ঈদের নামাজ কি ওয়াজিব?
ইমাম আবূ হানীফা (রহ.) বলেছেন, ঈদের সালাত প্রত্যেক ব্যক্তির উপর ওয়াজিব। ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ একই মত পোষণ করেন।
প্রমাণসমূহ: ঈদের নামাজ কি ফরজ না ওয়াজিব? / ঈদের সালাত আদায় করা কি ?
১. আল-কুরআন:
আল্লাহ বলেন,
“অতএব, তোমার প্রতিপালকের জন্য নামাজ আদায় করো এবং কোরবানি করো।” (সূরা আল-কাওসার: ২)
ব্যাখ্যা অনুসারে, এটি ঈদের নামাজ ও কুরবানির প্রতি ইঙ্গিত করে।
২. হাদিস:
আবু সাঈদ খুদরি (রাঃ) বর্ণনা করেন,
“নবী (সাঃ) ঈদের দিনে ঈদের নামাজ আদায় করতেন এবং খুতবা দিতেন।” (বুখারি, মুসলিম)
✅ এটি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখনো বাদ দেননি, তাই এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয়।
✅ তবে কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে এটি না পড়েন, তাহলে গুনাহ হবে, সুন্নাহ পরিত্যাগের কারণে সওয়াব থেকে বঞ্চিত হবেন।
🔴 মহিলাদের ঈদের নামাজের বিধান কী? / মহিলাদের ঈদের নামাজের বিধান কী?
জি অবশ্যই মহিলারা ঈদগায়ে আসতে পারবে মূলত এই উপমহাদেশে ইবাদতের ক্ষেত্রে মহিলাদের ঠকানো হয় আসুন আমরা কুরআন এবং সুন্নাহ থেকে সঠিক তথ্যটি জেনে আমল করি
ঈদায়নের জামা‘আতে পুরুষদের পিছনে পর্দার মধ্যে মহিলাগণ প্রত্যেকে বড় চাদরে আবৃত হয়ে যোগদান করবেন। প্রয়োজনে একজনের চাদরে দু’জন আসবেন। খত্বীব ছাহেব নারী-পুরুষ সকলকে উদ্দেশ্য করে তাদের বোধগম্য ভাষায় কুরআন-হাদীছের ব্যাখ্যাসহ খুৎবা দিবেন। ঋতুবতী মহিলাগণ কেবল খুৎবা শ্রবণ করবেন ও দো‘আয় শরীক হবেন। ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী বলেন যে, ‘উক্ত হাদীছের শেষে বর্ণিত دَعْوَةُ الْمُسْلِمِيْنَ কথাটি ‘আম’। এর দ্বারা ইমামের খুৎবা, নছীহত ও দো‘আ বুঝানো হয়েছে। কেননা ঈদায়নের ছালাতের পরে ইমাম ও মুক্তাদী সম্মিলিত দো‘আর প্রমাণে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) থেকে কোন ছহীহ হাদীছ বা ছাহাবায়ে কেরাম থেকে কোন আমল বর্ণিত হয়নি’। [মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১৪৩১ ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, ‘দুই ঈদের ছালাত’ অনুচ্ছেদ-৪৭; মির‘আত ২/৩৩১; ঐ, ৫/৩১।]
৩. বাড়িতে ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম
✅ নিয়ত: প্রত্যেক কাজ নিয়তের সাথে সম্পর্কিত; আর অন্তরের সংকল্প করাকেই নিয়ত বলে কেননা নিয়ত পড়ার বিষয় নয় নিয়ত ত করার বিষয় তাই অন্তরে সংকল্প করাকেই নিয়ত বোঝায় প্রচলিত যে নাওয়াইতু আন, এসব মানুষের বানানো নিয়ত আছে এগুলো অবশ্যই পরিত্য
✅ প্রথম রাকাতে তাকবিরে তাহরিমার পর ৭টি অতিরিক্ত তাকবির।
✅ দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহার আগে ৫টি অতিরিক্ত তাকবির।
✅ বাকি নামাজ সাধারণ সালাতের মতো পড়তে হবে।
✅ খুতবা পড়া বাড়িতে জরুরি নয়।
৩. ঈদের দিন মহিলাদের জন্য সুন্নত আমল
যেহেতু মহিলাদের ঘরে থেকে, তাই তারা অন্যান্য আমল করতে পারেন:
✅ গোসল ও পরিষ্কার পোশাক পরিধান করা
✅ তাকবির বলা (“আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ”)
✅ বেশি বেশি দোয়া করা ও তাসবিহ পড়া
✅ আত্মীয়-স্বজন ও দরিদ্রদের সাহায্য করা
- যদি সম্ভব হয়, ঈদের নামাজ জামাতে পড়াই উত্তম।
- হানাফি মতে, বাড়িতে ঈদের নামাজ পড়া যায় না।
- শাফেয়ি, মালিকি ও হানবলি মতে, কেউ চাইলে বাড়িতে ঈদের নামাজ পড়তে পারেন।
- যদি কেউ জামাতে অংশ নিতে না পারেন, তবে তিনি নফল নামাজ পড়তে পারেন ও তাকবির জারি রাখতে পারেন।
সর্বোত্তম উপায়:
যদি সম্ভব হয়, ঈদের নামাজ ঈদগাহে পড়ুন।
🔴 ঈদের নামাজ না পেলে কী করণীয়?
ঈদের জামাত না পেলে করণীয়
একদল ওলামায়ে কেরাম বলেছেন যে, যেহেতু তিনি ঈদের সালাত আদায় করতে পারেননি, সেহেতু তিনি একাকী সালাত আদায় করে নেবেন। তিনি বলেন, যদি অধিক সংখ্যক লোক হয়, তাহলে তিনি সেখানে জামাত করে ঈদের সালাত আদায় করতে পারেন।
🔴 ঈদের নামাজে ৬ তাকবীরের নিয়ম কী? উপস্থাপিত দলীল সমূহ পর্যালোচনা
আসুন নিজের বিবেক বুদ্ধি দিয়ে চিন্তা করে দেখি কেন আমরা সত্য গ্রহণ করছি না, ইনশাআল্লাহ দলিল ভিত্তিক এই আলোচনার মাধ্যমে আপনার সকল বিষয় পরিষ্কার হয়ে যাবে কোনটি সত্য কোনটি মিথ্যা
✅ বারো তাকবীর সম্পর্কে কতিপয় ছহীহ হাদীছ :
(১) আয়েশা (রাঃ) বলেন, كَانَ يُكَبِّرُ فِي الْعِيدَيْنِ فِي الْأُولَى سَبْعًا قَبْلَ الْقِرَاءَةِ، وَفِي الْآخِرَةِ خَمْسًا قَبْلَ الْقِرَاءَةِ، ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ঈদুল ফিৎর ও ঈদুল আযহাতে প্রথম রাক‘আতে সাত তাকবীর ও দ্বিতীয় রাক‘আতে পাঁচ তাকবীর দিতেন (রুকূর তাকবীর ব্যতীত)’।[ইবনু মাজাহ হা/১২৭৭-৭৯; তিরমিযী হা/৫৩৬; মিশকাত হা/১৪৪১। হাদীছ ছহীহ।]
(২) আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আছ (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, التَّكْبِيْرُ فِي الْفِطْرِ سَبْعٌ فِي الْأُولَى، وَخَمْسٌ فِي الْآخِرَةِ، ‘ঈদুল ফিৎরের প্রথম রাক‘আতে সাত তাকবীর এবং দ্বিতীয় রাক‘আতে পাঁচ তাকবীর রয়েছে’।[আবূদাঊদ হা/১১৫১; আহমাদ হা/৬৬৮৮, শু‘আইব আরনাঊত্ব হাসান বলেছেন, মুসনাদে আহমাদ ১১/২৮৩; তিরমিযী হা/৫৩৬।]
(৩) ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,فِي تَكْبِيْرِ الْعِيدَيْنِ : فِي الرَّكْعَةِ الْأُولَى سَبْعًا ، وَفِي الثَّانِيَةِ خَمْسَ تَكْبِيْرَاتٍ، ‘ঈদায়নের প্রথম রাক‘আতে সাত এবং দ্বিতীয় রাক‘আতে পাচ তাকবীর রয়েছে’।[শারহু মা‘আনিল আছার হা/৭২৬৮; তারীখে বাগদাদ হা/৩৪৯৩। ছহীহ। ]
(৪) আম্মার বর্ণনা করেছেন যে, كَبَّرَ فِي الْعِيدِ فِي الرَّكْعَةِ الْأُولَى سَبْعًا ثُمَّ قَرَأَ، وَكَبَّرَ فِي الثَّانِيَةِ خَمْسًا ‘ইবনে আববাস (রাঃ) ঈদের ছালাতের প্রথম রাক‘আতে সাত তাকবীর দিতেন অতঃপর ক্বিরাআত পাঠ করতেন। এরপর দ্বিতীয় রাক‘আতে পাঁচ তাকবীর দিতেন’।[ত্বাবারানী হা/১০৭০৮; মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/৫৭০১, ৫৭২৪; শারহু মা‘আনিল আছার হা/৭২৮১, সনদ ছহীহ; বায়হাক্বী, আস-সুনানুল কুবরা হা/৬১৮১।]
এছাড়াও বারো তাকবীরের পক্ষে 150+ আরো অনেক হাদীছ রয়েছে।[বায়হাক্বী হা/৬১৭৭; কাশফুল আসতার হা/৬৫৫; মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক্ব হা/৪৮৯৫; সুনানে দারাকুত্বনী হা/১৭২৭; ইমাম মুহাম্মাদ, মুওয়াত্ত্বা মুহাম্মাদ হা/২৩৭; বায়হাক্বী, আস-সুনানুল কুবরা হা/৬১৭৯; মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/৫৭২১; বায়হাক্বী, আস-সুনানুল কুবরা হা/৬১৮০; মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/৫৭১৮; মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/৫৭২০। ]
ছয় তাকবীরের পক্ষে পেশকৃত হাদীছগুলির পর্যালোচনা ❌ মারফূ‘ হাদীছসমূহ :
দলীল-১ :
নবী করীম (ছাঃ)-এর জনৈক ছাহাবী বর্ণনা করেছেন যে, রাসূল (ছাঃ) আমাদেরকে নিয়ে ঈদের ছালাত পড়লেন এবং তিনি চারটি করে তাকবীর দিলেন। ছালাত সমাপ্ত করে আমাদের দিকে তাকিয়ে বললেন যে, তোমরা ভুলে যাবে না যে, জানাযার তাকবীরের মত। এই বলে তিনি বৃদ্ধাঙ্গুলি গুটিয়ে বাকী চার আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করলেন।[শারহু ম‘াআনিল আছার হা/৭২৭৩; মাওলানা আব্দুল মতীন, দলিলসহ নামাযের মাসায়েল পৃঃ ৩৬০, ৩৬১; মুফতী গোলামুর রহমান, সলাতুন নবী পৃঃ ৩৩৫। ]
তাহক্বীক্ব : হাদীছটি যঈফ। ওয়াযীন বিন আত্বা (রহঃ) দুর্বল হিফযের অধিকারী। ইবনে হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেছেন, ‘ওয়াযীন বিন আত্বা… বাজে হিফযের অধিকারী।[তাক্বরীবুত তাহযীব, রাবী নং ৭৪০৮। ] ইবনে সা‘দ (রহঃ) বলেছেন, ‘তিনি হাদীছে যঈফ ছিলেন’।[আত-ত্বাবাক্বাতুল কুবরা, রাবী নং ৩৯০৬।]
অপর রাবী ওয়াযীন-এর উস্তাদ আবূ আব্দুর রহমান ক্বাসেম বিন আব্দুর রহমান আশ-শামী সম্পর্কে ইবনুত তুরকুমানী হানাফী (রহঃ) বলেছেন, ‘ক্বাসেম সম্পর্কে আহমাদ ইবনে হাম্বল বলেছেন, তিনি আলী বিন যায়দ হ’তে আশ্চর্যজনক হাদীছ বর্ণনা করতেন’।[আল-জাওহারুন নাক্বী ৬/১৪।] হাফেয আলাঈ (রহঃ) বলেছেন, ক্বাসেম বিন আব্দুর রহমান বিতর্কিত রাবী।[1জামে‘উত তাহছীল, রাবী নং ৬২৫।]
সুতরাং উভয়ই বিতর্কিত, যঈফ রাবী। পক্ষান্তরে এ হাদীছে চার চার তাকবীরের কথা রয়েছে। অথচ হানাফীরা তিন তিন তাকবীর প্রদান করেন। সুতরাং এই হাদীছটি ছয় তাকবীরের পক্ষে দলীল হ’তে পারে না।
দলীল-২ :
মাকহূল বলেছেন, আমাকে আবূ হুরায়রার সাথী আবূ আয়েশা বলেছেন, হযরত সাঈদ বিন আছ হযরত আবূ মূসা আশ‘আরী এবং হুযায়ফাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ঈদুল ফিৎর এবং ঈদুল আযহার ছালাতে কত তাকবীর বলতেন? আবূ মূসা আশ‘আরী বলেছেন, চার চার তাকবীর বলতেন। যেভাবে জানাযার ছালাতে বলতেন। হুযায়ফা বললেন, ঠিক বলেছে। আবূ মূসা বললেন, যখন আমি বছরার হাকিম ছিলাম তখন এভাবে তাকবীর বলা হ’ত। আবূ আয়েশা বলেন যে, আমি সাঈদ বিন আছ-এর কাছে (প্রশ্ন করার সময়ে স্বয়ং) হাযির ছিলাম।[আবূদাঊদ হা/১১৫৩; দলিলসহ নামায পৃঃ ৩৬১, ৩৬২; সলাতুন নবী হা/২৯১, পৃঃ ৩৩৪।]
জবাব : হাদীছটির সনদ যঈফ। কারণ এর রাবী আবূ আয়েশাহ হ’লেন অজ্ঞাত। তাকে ওবায়দুল্লাহ মুবারকুপুরী[মির‘আতুল মাফাতীহ ৫/৫৭।] শায়খ আলবানী[মিশকাত হা/১৪৪৩। ] এবং শায়খ যুবায়ের আলী যাঈ যঈফ বলেছেন।[আনওয়ারুছ ছহীফাহ, যঈফ আবূদাঊদ হা/১১৫৩, পৃঃ ৫১।]
এর আরেকজন রাবী আব্দুর রহমান বিন ছাওবান বিন ছাবেত সম্পর্কে ইবনে হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, ‘আব্দুর রহমান বিন ছাবেত বিন ছাওবান…..সত্যবাদী, ভুল করতেন। তাকে কাদারিয়া হওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। আর তার শেষ বয়সে স্মৃতি পরির্বতন হয়ে গিয়েছিল’।[তাক্বরীবুত তাহযীব, রাবী নং ৩৮২০।]
আল্লামা আব্দুল হাঈ লাক্ষ্ণৌবী (রহঃ) বলেছেন, ‘এতে আব্দুর রহমান বিন ছাওবান নামক রাবী রয়েছেন। তিনি বিতর্কিত রাবী’।[আত-তা‘লীকুল মুমাজ্জাদ ১/৬১৬। ] এ হাদীছেও মোট আট বার তাকবীরের কথা রয়েছে। এটিও প্রচলিত ছয় তাকবীরের পক্ষে দলীল হ’তে পারে না।
মাওকূফ হাদীছসমূহ :
দলীল-১ :
ইবনে মাস‘ঊদ (রাঃ) বসা ছিলেন। হুযায়ফা (রাঃ) ও আবূ মূসা আশ‘আরী (রাঃ) তার কাছে উপস্থিত ছিলেন। তাদের দু’জনকে সাঈদ ইবনুল আছ (রাঃ) ঈদুল ফিৎর এবং ঈদুল আযহার তাকবীর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। তিনি বললেন, তাকে জিজ্ঞেস করুন। আর উনি বললেন, তাকে জিজ্ঞেস করুন। অবশেষে হুযায়ফা (রাঃ) বললেন, তাকে জিজ্ঞেস করুন। এই বলে তিনি আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ)-কে দেখিয়ে দিলেন। অতঃপর তিনি আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন। ইবনে মাসঊদ (রাঃ) তখন তাকে বললেন, চার তাকবীর দিবে। এরপর ক্বিরাআত পাঠ করবে। আবার তাকবীর বলে রুকূ করবে, এরপর দ্বিতীয় রাক‘আতের জন্য দাঁড়াবে এবং ক্বিরাআত পাঠ করবে। ক্বিরাআতের পর চার তাকবীর প্রদান করবে।[মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক্ব হা/৩৬৮৭; দলিলসহ নামাযের মাসায়েল পৃঃ ৩৬২, ৩৬৩।]
তাহক্বীক্ব : আবূ ইসহাক্ব আস-সাবীঈ (রহঃ) তাদলীস করেছেন।[ইবনে হাজার, ত্বাবাক্বাতুল মুদাল্লিসীন, রাবী নং ৯১।] সুতরাং বর্ণনাটি যঈফ। এছাড়াও এ হাদীছে আট তাকবীরের কথা বলা হয়েছে।
দলীল-২ :
‘জানাযার ছালাতের মত দু’ঈদে চার তাকবীর হবে’।[ত্বাবারানী, আল-মু‘জামুল কাবীর হা/৯৫২২; দলিলসহ নামাযের মাসায়েল পৃঃ ৩৬৩।]
তাহক্বীক্ব : সনদ যঈফ। সুফিয়ান ছাওরী (রহঃ) এখানে তাদলীস করেছেন।[ত্বাবাক্বাতুল মুদাল্লিসীন, রাবী নং ৫১। ]
কুরআন ও হাদিস থেকে প্রমাণ
- কুরআন: আল্লাহ বলেন, “অতএব, তোমার প্রতিপালকের জন্য নামাজ আদায় করো এবং কোরবানি করো।” (সূরা আল-কাওসার: ২)
- হাদিস: আবু সাঈদ খুদরি (রাঃ) বলেন, “নবী (সাঃ) ঈদের দিনে ঈদের নামাজ পড়তে যেতেন এবং নামাজের পর খুতবা দিতেন।” (বুখারি, মুসলিম)
উপসংহার
ঈদের নামাজ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা কুরআন ও হাদিসের সুন্নাহ অনুসারে আদায় করা উচিত। আমরা যেন যথাযথভাবে ঈদের নামাজ পড়ি এবং এর সাথে সম্পর্কিত সুন্নাহসমূহ পালন করি। আল্লাহ আমাদের সকল ইবাদত কবুল করুন। আমিন।
Our Telegram Froup is = Joun Now
Thank you very much
Table of Contents